ইলিজারভ হাড় জোড়া লাগানোর একধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য সোভিয়েত চিকিৎসক গাভরিল ইলিজারভ এই চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। তারপর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা পদ্ধতিটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙ্গে গেলে প্রচলিত চিকিৎসায় অনেক সময়ই পা কেটে ফেলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। তবে ইলিজারভ পদ্ধতি সেখান থেকেই চিকিৎসা শুরু করে এবং ভাঙা হাড় জোড়া লাগিয়ে থাকে।
এ চিকিৎসায় দুই থেকে ছয় মাস সময় লাগে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিক ভাবে হাঁটা ও দৌঁড়ানো এমনকি ভারি কাজও করতে পারেন। জন্মগত ভাবে হাড়ের অস্বাভাবিক গঠন, বাঁকা হাড় কিংবা পা ছোট বড় হলেও এই চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা সম্ভব অনেক ক্ষেত্রেই। এছাড়াও বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী দৈহিক উচ্চতা বাড়ানোর জন্য এই চিকিৎসা জনপ্রিয় হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা বাড়ানো যায়। বিবিসির এক জরিপে দেখা যায় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, স্পেন ও ভারতসহ পৃথিবীর বারোটি দেশে উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য এই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিবিসির তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও স্পেনে প্রতি বছর প্রায় ১০০-২০০ মানুষ এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের উচ্চতা বাড়িয়ে থাকে। তবে অন্য দেশগুলোতে এই প্রবণতা কম, ২০-৪০ জন। বাংলাদেশে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে এবং জন্মগত হাড়সমস্যায় এই চিকিৎসা সাফল্যের সাথে প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে ডাক্তার মোফাখখারুল বারীকে এই চিকিৎসার অগ্রদূত বলা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তার বারী এ পর্যন্ত প্রায় ১০ ইঞ্চির উপরে হাড় লম্বা করে ভাঙা পা জোরা লাগাতে সমর্থ হয়েছেন।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ইলিজারভ চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইসমাইল হোসেন জানান, অর্থোপেডিক্সে অন্য গতানুগতিক চিকিৎসার যেখানে শেষ, ইলিজারভ চিকিৎসার সেখানে শুরু। এটা এমন এক পদ্ধতি যেখানে কেটে অপারেশন করতে হয় না। বাইরে থেকে কিছু তার নিয়মমাফিক ভাঙা হাড়ের ভেতর প্রবেশ করানো হয়। এরপর রিংয়ের সাহায্যে সেই তারগুলোকে আটকিয়ে এক ধরনের টানার ব্যবস্থা করা হয়। তারগুলো ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গের মত কাজ করে। অপারেশনের পরের দিন থেকেই রোগী সম্পূর্ণ ভর দিয়ে হাঁটতে পারে। এ অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে হাড় জোড়া লাগাতে সময় লাগে গড়ে ৪-৬ মাস। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও এ অপারেশন খুবই সুবিধাজনক।
জটিলতা সমূহ
সব চিকিৎসা পদ্ধতির মতো এই চিকিৎসাতেও কিছু ঝুঁকি আছে। তবে এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে জটিলতা কতটুকু তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত নেই। এ চিকিৎসার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া বা পায়ের হাড়ের জোড়া না লাগার মতো যে কোনরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।চিকিৎসার পর দীর্ঘ দিন ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। এছাড়াও কারও কারও ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভূত হয়।
আশার কথা হচ্ছে আগের চাইতে এখন এ অপারেশনের প্রযুক্তি উন্নত এবং অধিকতর নিরাপদ হয়েছে। কিন্তু এই অপারেশনের পর নতুন হাড়, মাংসপেশী, স্নায়ু, রক্তবাহী নালী এবং চামড়া তৈরি হতে হয় - তাই প্রক্রিয়াটা এখনও অত্যন্ত জটিল রয়ে গেছে। এবং, জটিলতা দেখা দেবার হারও উঁচু। তারপরও দুর্ঘটায় আহত হয়ে পা কেটে ফেলার চেয়ে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে রোগীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
3 Comments
ধন্যবাদ।
ReplyDeleteসুন্দর তথ্য। জেনে উপকার হলো।
ReplyDeleteঢাকায় কোথায় আছে?
ReplyDelete