ইসলামে জিহাদের সীমানা কতটুকু?


জিহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো নিজের নফস বা আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জিহাদজিহাদ আল নাফ। ইসলামি শরিয়াহ মেনে যে কোন পর্যায় পর্যন্ত জিহাদকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সর্ব শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো নিজের অহমিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করা। নবী করিম (সাঃ) এর উপর মক্কায় অবস্থানকালে যে সূরা নাজিল হয়েছে তা মক্কী সূরা আর মদিনায় অবস্থানকালে যে সূরাগুলো নাজিল হয়েছে তা মাদানি সূরা। মক্কী সূরায় প্রাধান্য পেয়েছে কিভাবে ঈমান জোরালো করতে হবে আর মাদিনী সূরায় প্রাধান্য পেয়েছে কি ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে হবে-আকামতে দ্বীন অর্থাৎ জিহাদ। নবীজীর (সাঃ) মাদিনার জীবনে মুসলমানরা বেশ শক্তিশালী হয় এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় কিছু স্বসস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এসময়ের সূরাগুলোতে সেই জিহাদের কথাই উল্লেখ আছে। 

মক্কায় থাকার সময় বেশ কিছু মুসলিমকে নির্যাতন করে মেরেফেলেছিল। তখন অনেক সাহাবী লড়াই করতে চাইলেন, যেমন হযরত হামজা(রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) অন্যতম। তাঁরা ছিলেন যোদ্ধা-কিন্তু নবীজী বলেন সবর করার তখন সেই সবর করাটাই ছিল জিহাদ। যদি সামর্থ থাকে আর পালটা আক্রমণ করেন সেটা ভালো-আবার আপনার আক্রমণ করার সামর্থ আছে কিন্তু আপনি আক্রমণ করলেন না, সবর করলেন,সেটাও অনেক বড় জিহাদ। হযরত হামজা (রাঃ) খুব বড় যোদ্ধা ছিলেন, তাকে বলা হতো মরুভূমির সিংহ। তিনি হুংকার দিয়ে বলেছিলেন কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে আমি তার প্রতিশোধ নিবো-কিন্তু নবী করিম (সাঃ) বলেছিলেন সবর কর। আর তখন সবর করাই ছিল জিহাদ। একেক সময় জিহাদ একেক রকম হয়। শুধুমাত্র শত্রুর সাথে যুদ্ধ করাই জিহাদ নয়-সবরও এক ধরণের জিহাদ। 

হযরত আয়শা (রাঃ), নবীজীর স্ত্রী, নবীজীর কাছে প্রশ্ন করলেন, আমরাও কি জিহাদ করবো? জিহাদ বলতে তিনি যুদ্ধের কথা বলেছিলেন। সহি বুখারী ৪ নাম্বার খণ্ডের ২৭৮৪ নম্বর হাদিস অনুযায়ী, তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো সঠিক ভাবে হজ্ব পালন করা। এছাড়াও সহি বুখারির ৪ নম্বর খণ্ডের ৩০০৪ নম্বর হাদিসে আছে, এক লোক নবীজীকে প্রশ্ন করলেন, আমরা কি জিহাদে (যুদ্ধে) যাব? নবীজী জিজ্ঞেস করলেন,তোমারা কি বাবা-মা আছে? লোকটি হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ায় নবীজী বলেন, তোমার জন্য শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো বাবা-মায়ের সেবা করা। কাজেই পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে জিহাদ একেক সময় একেক রকম হয়। 

এছাড়াও সুন্না নেসাইতে উল্লেখ করা হয়েছে, নবীজী (সাঃ) বলেন, কোন অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কথা বলাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ। তার মানে এই নয় যে সবার জন্যই বাবা-মা কে সেবা করা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ। নবীজী জানতেন যে সেই লোকের বাবা-মায়ের সেবা প্রয়োজন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে জিহাদ একেক সময় একেক রকম হয়। 

নিজের সম্পদ দ্বীনের প্রতিষ্ঠার পথে উৎসর্গ করাও জিহাদ হতে পারে। সুনান আবু দাউদ খণ্ড ২, হাদিস নম্বর ১৬৭৪ এ বর্ণীত আছে, একবার জিহাদের সময় নবীজী সাহাবাগণকে বললেন, তোমাদের সম্পদের যতক্ষানি দিতে পার-দান করো জিহাদের জন্য। হযরত ওমর (রাঃ) খুব ধনী ছিলেন। তিনি সম্পতির অর্ধেক দান করলেন-নবীজীর (সাঃ) হাতে তুলে দিলেন এবং বললেন মাশা আল্লাহ  আমার সম্পদের অর্ধেক দান করেছি। মনে মনে ভেবেছিলেন তিনির সবার ওপরে। তার অর্থ সবচেয়ে বড় পুরষ্কার পাবেন। নবীজী বললেন, হযরত আবু বকর (রাঃ)তাঁর সমস্ত সম্পতি দান করেছেন। তাই তিনি হযরত ওমরের চেয়ে বড় পুরষ্কার পাবেন। পরিমাণের দিক থেকে হযরত ওমরের সম্পতি অনেক বেশি হলেও হযরত আবু বকর (রাঃ) সমস্ত সম্পত্তি দান করার জন্য বেশি সওয়াব পাবেন। 

 

কাজেই আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে জিহাদের অনেক পথ আছে। শুধু ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণই জিহাদ নয়। তবে ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ উত্তম জিহাদ।   


Post a Comment

0 Comments